স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেছেন, নিরাপদ খাদ্য যদি পেতে হয় বা কৃষকদেরকে উৎসাহিত করতে হয় তাহলে একটু বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হবে। সবজি চাষ করতে যেসমস্ত উপাদান লাগে সেগুলোর খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। তারপরও যদি বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা যায়, মধ্যসত্বভোগীদের হাত থেকে কৃষকদেরর রক্ষা করা যায়। তাহলে অনেকাংশে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
রবিবার (০৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটরিয়ামে পঞ্চমবারের মতো জাতীয় সবজি মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন
প্রতিমন্ত্রী বলেন বলেন, মেলায় অনেক সবজির প্রযুক্তি আনা হয়েছে। এ প্রযুক্তিগুলো সম্প্রসারণের মাধ্যমে জেলা বা উপজেলা নিলে মানুষ আরো বেশি উপকৃত হবে। আজ থেকে দশ পনের বছর আগে ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম কেউ চিনতো না। এখন দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশ শাকসবজিতে প্রভূত উন্নতি করেছে, যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। এ অবদান বর্তমান সরকার ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সকলের। তিনি আরও বলেন, আমাদের সবজিতে যেভাবে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যার ফলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হচ্ছে। আমাদেরকে জৈব কৃষিতে যেতে হবে। মানুষ এখন অনেক সচেতন। সরকার কৃষকদের কাছে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সবজির বাজার আরো দ্রুত সম্প্রসারিত হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব জনাব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, সবজি যদি পুষ্টিকর না হয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। এজন্য আমরা প্রতিটি উপজেলায় নিরাপদ সবজি গ্রাম তৈরি করছি। আস্তে আস্তে সব উপজেলায় নিরাপদ সবজি কর্ণার তৈরি করা হবে। রাজধানীর সেচ ভবনের প্রাঙ্গনে শুক্র ও শনিবার কৃষকের বাজার বসছে। এ বাজারে সব সবজিই নিরাপদ। যা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে। এ বাজারে নিরাপদ সবজির দাম বেশি হলেও বিক্রি বাড়ছে। এভাবে আমরা ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ সবজি খাওয়ার আকংখা তৈরি ও পৌঁছে দিতে পারবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ কবির হোসেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শাক-সবজি আবাদে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান, জেলা ও মেলায় অংশগ্রহনকারী স্টলের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করেন। পুরষ্কার হিসেবে ছিলো ক্রেষ্ট, সনদ ও নগদ টাকা। জাতীয় পর্যায়ে ২০১৯ সালে শাকসবজি আবাদে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ব্যক্তিগত পর্যায়ে ঢাকার সাভার উপজেলার মো. কোব্বাত হোসাইনকে প্রথম পুরস্কার প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় হয়েছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মো. আজাগার আলী। তৃতীয় হয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মোছা: নুরুন্নাহার বেগম ।
এছাড়াও বাড়ির ছাদে শাকসবজি আবাদে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে ঢাকার মিরপুর এলাকার শাহানাজ মোস্তফা ও চট্টগ্রামের লালখান বাজারের মোস্তাকুর রহমান এবং জাতীয় পর্যায়ে ঢাকার শেওড়া পাড়ার মো. দুলু মিয়া, মানিকনগরের জাহানারা লাউজু এবং ওয়ারীর মো. আজিজুল ইসলামকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
শাক-সবজি উৎপাদনে হেক্টর প্রতি গড় ফলন সর্বোচ্চ ও দেশের সবজির চাহিদা পূরনে বিশেষ অবদান রাখায় জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে যশোর, যৌথভাবে দ্বিতীয় রংপুর, জামালপুর এবং ও তৃতীয় পাবনা জেলা।
স্টলের যথার্থতা, সাজসজ্জা, প্রদর্শিত দ্রব্যের মান ও পরিমান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা উপস্থাপন করে জাতীয় সবজি মেলা ২০২০ এ অংশগ্রহনকারী স্টলগুলোর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে প্রথম হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। দ্বিতীয় হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং যৌথভাবে তৃতীয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও কৃষি বিপনন অধিদপ্তর (ড্যাম)। বেসরকারি পর্যায়ে প্রথম হয়েছে এসিআই সীড, এসিআই লিমিটেড, দ্বিতীয় মেটাল এগ্রো লিমিেিটড এবং তৃতীয় কৃষক বাংলা এগ্রো প্রোডাক্টস । মেলায় অংশগ্রহনকারী অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।
মেলায় সরকারি ৮টি ও বেসরকারি ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের ৬৫টি স্টল ও ৪টি প্যাভেলিয়ন অংশ নেয়। তিন দিনের এ মেলায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার সবজি বিক্রি হয়। ‘পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ সবজি’ প্রতিপাদ্যে এ মেলার আয়োজক কৃষি মন্ত্রণালয়।